ছোট বেলা থেকে বহু পোলাপাইনকে বাইরে পড়তে যেতে দেখছি। আমার বড় ভাইরা গেছে, বন্ধু বান্ধব গেছে। দেশ ছেড়ে যারা বাইরে পড়তে যায় তাদের মোটাদাগে ক্যাটাগোরাইজ করা যায়। কেউ কেউ দেশ নিয়ে বিরক্ত। জীবনটাকে এনজয় করতে যায়, গ্রেটার অপর্চুনিটি, বেটার লাইফএর খোঁজে পাড়ি জমায় বাইরে। কেউ আবার ডিগ্রির জন্য। আমাদের দেশ বৃটিশ শাসন থেকে এখনও বাইর হতে পারে নাই। পশ্চিমা ডিগ্রি বা চাকরীর এক্সপেরিয়েন্স এমপ্লয়াররা পিজ্জা হাটের পিজ্জার মতো খায় (দেশ ও বিদেশে কর্মক্ষেত্র আর লেখাপড়ার তুলনামূলক কোয়ালিটির ব্যাপারটাও জানি, বাট সিরিয়াস প্যাচাল পারার মুড নাই)। অনেকে আবার যায়, যেয়ে ফিরে আসে দেশের টানে।

আমি কোন ক্যাটাগরিতেই পরি না। আমি ঘুরতে ভালবাসি। (দেশ আর দেশের ইতিহাসও ভালবাসি তবে পেট্রিয়টিজম নিয়ে একটা মিম আমার খুব পছন্দের: দুইটা সেম টু সেম টবে সেম টু সেম গাছ আর আমার গাছ তোমারটার চেয়ে ভাল-এইটা ভাবাই পেট্রিয়টিজম।) দেশে যেই চাকরী করতাম তাতে ঘুরার টাকা বা সময় কোনটাই জুটতো না। চামে দিয়ে বামে একখান ফান্ডিং পেয়ে গেলাম। নতুন দেশ, নতুন শহরে বসত গড়ব, থাকব খাব ওই দেশের টাকায়- চলে আসলাম।

নতুন নতুন সবই ভাল লাগে। নতুন মানুষ, নতুন কালচার। রাস্তায় চোখাচোখি হলে সবাই হাসি দিয়ে গ্রিট করে। দরজা দিয়ে ঢোকা বা বের হবার সময় সামনের জন পরের জনের জন্য গেট ধরে রাখে। দেশে থাকতে আমি এই কাজটা করতাম, ফেরত পেতাম না। এখানে ফেরত পেতে বেশ ভাল লাগে। ছোটবেলা থেকে ইংরেজি মুভি, গান, সিটকম ভাল লাগত। বলছি না যে ওই সব আরেকটা দেশের সংস্কৃতিকে ১০০ ভাগ রেপ্রেজেন্ট করে। কিন্তু ওইসব দেখে বড় হইছি, পেপার টেপারে আন্তর্জাতিক খবরাখবর রাখছি দেখেই হয়ত কালচারাল শক পাই নাই।

ট্রাফিক জ্যাম বা বিউরক্র্যাসি- যেই কারণেই হোক, দেশে থাকতে একদিনে ১-২টার বেশি কাজ করা যেত না। এইখানে দিনে ১০-১২টা টাস্ক করা এক্সপেক্টেড। নিজের এফিশিয়েন্সি দেখে নিজেই মাঝে মধ্যে মুগ্ধ হই। যেই আমি চান্স পাইলেই বিছানায় গড়াগড়ি খেতাম বা টিভির সামনে পরে থাকতাম, সেই আমি কতই না অ্যাকটিভ। ঠ্যালার নাম বাবাজি আফটার অল। টাইম ইজ মানি- মানি না হলেও সারভাইভাল। ওয়েস্ট করলে বেটার লাইফের চান্স শেষ। এই জিনিসটা ভাল লাগে যে এখানে কষ্টের ফল মোটামুটি হাতেনাতে পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটির টিচাররা আগ্রহ দেখলে হেল্প করতে বসে থাকে। অপরচুনিটি কারও জন্য কম বা বেশি  না। সবার কাছে সব সুযগের খবর দেয়া হয়। তুমি কাজে লাগাতে পারলে তোমার লাভ।

হেডলাইন আর ব্রেকিং নিউজের জামানায় বিস্তারিত সংবাদ দেয়ার কারণ হল, ট্রাভেলিংয়ে কনসেপ্ট টা অনেক বিস্তারিত। নতুন নতুন জায়গায় যাওয়া যেমন ভ্রমণ, নতুন নতুন লাইফ স্টাইলেও ভ্রমণ করা যায়। আমি ওইটা করছি। ইন্টারেস্টিং।

দেশে থাকতে চাকরী থেকে বাসায় ফেরার পথে একবার ৬ নম্বর বাসে উঠছিলাম। কন্ডাক্টর নিতে চায় নাই। মেয়ে মানুষ, বাসের পুরুষরা চিল্লাচ্ছিল, মেয়ে মানুষ উঠলে জায়গা ছাড়তে হবে। আকুতি করে খালি বলছিলাম, ভাই আমি পা-দানিতে ঝুলে যেতে পারব, জাস্ট আমার গায়ে ইচ্ছা করে হাতাইয়েন না। ক্লাস, রাস্তা-ঘাট, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, কনসার্ট, পার্টি, অফিস, অফিসের বস লেভেল- সব জায়গায় ছেলে মানুষ। ছেলে-মেয়ে রেশিও খুবই হাই। সত্যিই মনে হত, ইট ইজ আ ম্যান্স ওয়ার্ল্ড। ওইখানেই নিজের জেন্ডারকে কখনও কোন কিছুর জন্য বাঁধা হতে দেই নাই। মেন্স ওয়ার্ল্ড এই নিজের দুনিয়া বানাইছি। নিজেকে প্রমিস করছি, যেইটার উপর আমার হাত নাই ওইটার জন্য নিজেকে পিছাতে দিব না, ডিপ্রাইভ করব না। করিও নাই। প্রতিনিয়ত যুদবধ করছি। নিজেকে রেবেল রেবেল লাগত মাঝে মধ্যে। কাস্ত্র বা চের মত। এইখানে তো সব পাঙ্খা। সব জায়গায় ছেলে-মেয়ে ৫০-৫০। কি যে কমফোর্টেবল রাস্তায় হাঁটা…উফফফফ। আরাম লাগে অনেক।

জীবনের ২/৩ প্রবাবলি শেষ করে ফেললাম। এতদিনে নতুন একটা দেশের ছোট্ট একটা পার্ট সত্যিকার অর্থে দেখছি। আরও কত কিছু দেখার আছে। আকাশে রোজ নতুন নতুন জিনিস আবিস্কার হয়- ওইগুলাও জানা বাকি। জীবনে একটা ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ মাঠে থেকে দেখা বাকি। জুল ভার্নের বইয়ে সাগরতলের জগত পরেছিলাম প্রথম। তাও দেখা বাকি। ডারউইনের গালাপাগস, লারার ত্রিনিদাদ, দুই মেরু…উফফ…কতটুকু দেখতে পারব কে জানে! তবে আমার একটা খুব জ্ঞানী দোস্ত আছে। ও বলে, এই দেশে যা চাই, তা পেতে হলে নাকি কষ্ট করলেই হবে, পাওয়া যাবে অবশ্যই। তাই এই দেশকে লোকে ল্যান্ড অফ আপর্চুনিটি বলে। দেখি…পৃথিবীকে আপন করার পণ পূরণ করতে পারি কিনা।

আজাইরা কথা লিখে ব্লগ শুরু করলাম। অনেক রাত এখন, মাথা আউলানো। ব্লগিং কেন স্টার্ট করলাম শিওর না। কিন্তু, আমি সুপার লেভেলে নার্সিসিস্ট। আমার চিন্তা আমার খুবই পছন্দ। এই চিন্তাগুলা ছড়াতে ইচ্ছা করে। দেশে থাকতে একটা ছোট মেয়ে আমাকে অনেক বড় পুরস্কার দিয়েছিল…বলেছিল..আপনাকে দেখে আমি ইন্সপায়ার্ড। আমি আমার দেশের মেয়েগুলাকে এখানে এনে দেখাতে পারব না ইকুয়ালিটির মানে কি…কিন্তু আইডিয়া শেয়ার করতে পারব। চিন্তার খোরাক জাগাতে পারব।

যারা বিরক্ত হলেন লেখা পরে, তাদের জন্য: ফকিন্নির ব্লগে কি এক্সপেক্ট করছিলা মামা?